সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্কঃ সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। তিনি না থাকলে আমিই এক নম্বর, এমন কোনো অনুভূতি আমার আসে না। সাকিব ভাই যখন খেলে, তখনো চেষ্টা করি অলরাউন্ডার হিসেবে ছোট ছোট অবদান রাখার। উনি অনেক উঁচু মানের ক্রিকেটার, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। লম্বা সময় র্যাংকিংয়ের এক নম্বর অলরাউন্ডার ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার তুলনা চলে না।
পানির যেমন কঠিন, তরল ও বায়বীয় তিন অবস্থা, মেহেদী হাসান মিরাজেরও যেন তা-ই। পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে বদল হচ্ছে ভূমিকার। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ব্যাটিংয়ের জন্যই ছিল সুনাম, সঙ্গে বোলিংটাও ভালো পারতেন। টেস্ট অভিষেকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়ার পর থেকে পুরোদস্তুর অফস্পিনার। এশিয়া কাপে ঘটনাচক্রে ইনিংসের গোড়াপত্তনে নেমে যাওয়া মিরাজের গায়ে লেগে যাচ্ছে অলরাউন্ডারের তকমাও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে সাকিব আল হাসান না থাকায় নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারের বিকল্প হিসেবে তাঁর কাছেই প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি। দলের জন্য সবটুকু দিতে দ্বিধা নেই মিরাজের, তবে সযত্নে এড়িয়ে যেতে চাইলেন সাকিবের বিকল্প অলরাউন্ডারের মোড়কটা। মিরাজের একটাই কথা, এই বিশেষণটা বরাদ্দ সাকিবের জন্যই।
তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই খেলতে হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্বকে চাপ হিসেবে দেখতে মোটেও রাজি নন মিরাজ, ‘সাকিব ভাই নেই, আশা করব তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যোগ দেবেন দলের সঙ্গে। তাঁরা না থাকাটা চাপ নয়, বাড়তি দায়িত্ব হিসেবেই দেখি। চেষ্টা থাকবে বোলিংটা আরো ভালো করার, অন্য স্পিনারদের উৎসাহ দিয়ে সেরাটা বের করে আনার।’ নিজের বোলিং নিয়েও বেশ কাজ করছেন মিরাজ। টেস্টে তাঁকে উইকেটশিকারির ভূমিকায় বেশি দেখা গেলেও সীমিত ওভারের খেলায় তাঁর ভূমিকা থাকে রান আটকানোর। মিরাজ চাইছেন রানের চাকায় বাঁধ দেওয়ার পাশাপাশি উইকেটও তুলতে, ‘প্রতিপক্ষ যখন রান তাড়া করে, তখন আমার কাজটা হয় রান আটকানোর। যাতে অন্যদিক থেকে মাশরাফি ভাই, মুস্তাফিজ, সাকিব ভাই বা রুবেল ভাই উইকেট তুলে নিতে পারে। আমি রান থামিয়ে রাখলে প্রতিপক্ষ চাপে থাকবে, অন্য বোলার উইকেট পাবে। এর মধ্যে যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে আমিও উইকেট পাব।’ সে জন্য বোলিং নিয়ে বেশ কাজও করেছেন মিরাজ, যার ফলটা পাচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই, ‘আগে আমি সব ডেলিভারিই একই গতিতে করতাম। সিমের পজিশনও পরিবর্তন করেছি, কখনো ৪৫ ডিগ্রি কখনো ৯০ ডিগ্রি রেখে বল করছি। গতিপথ পরিবর্তন করে নানা রকম বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছি।’
শুধু বোলিংই নয়, ব্যাটিংয়েও বাড়তি মনোযোগ মিরাজের, ‘সবাই কিন্তু আমার ব্যাটিং নিয়ে অনেক সাপোর্ট করে, বলে আমি ভালো ব্যাট করতে পারি। মাঝখানে একটু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। ব্যাটিং নিয়ে এখন কাজ করছি। আশা করি সামনে অবদান রাখতে পারব।’
পরিস্থিতি তাঁকে বানিয়ে দিয়েছে ওপেনার। মিরাজ বুঝে গেছেন, দলের প্রয়োজনে যেকোনো কিছুই করতে হতে পারে। চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করা মিরাজের কাছে বরং এই রোমাঞ্চগুলোই জীবনের আনন্দ, “আমি সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। কঠিন অবস্থার চ্যালেঞ্জ আমি উপভোগ করি। আর পেছন থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট যখন সমর্থন দেয়, সিনিয়র খেলোয়াড়রা যখন পাশে থাকে তখন আত্মবিশ্বাসটা অনেক বেড়ে যায়। (এশিয়া কাপ) ফাইনালের আগের রাতে মাশরাফি ভাই, রিয়াদ (মাহমুদ উল্লাহ) ভাই যখন বলল, ‘করতে পারবি, সমস্যা নাই’, তখন আত্মবিশ্বাসটা বাড়ল। আরো কিছু কথায় ভরসা পেলাম। আত্মবিশ্বাস থাকলে, বড়রা পাশে থাকলে বিশ্বাসটা বেড়ে যায়।”
সামর্থ্য আছে, আত্মবিশ্বাসেরও কমতি নেই। তাহলে সাকিবের অবর্তমানে অলরাউন্ডার তো মিরাজই! এমন প্রশ্নে বিনয়ের সঙ্গে দ্বিমত মিরাজের, ‘সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। তিনি না থাকলে আমিই এক নম্বর, এমন কোনো অনুভূতি আমার আসে না। সাকিব ভাই যখন খেলে, তখনো চেষ্টা করি অলরাউন্ডার হিসেবে ছোট ছোট অবদান রাখার। উনি অনেক উঁচু মানের ক্রিকেটার, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। লম্বা সময় র্যাংকিংয়ের এক নম্বর অলরাউন্ডার ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার তুলনা চলে না।’
তাই অলরাউন্ডার হবেন নাকি ছিলেন, অতশত ভাবনা হানা দেয় না মিরাজের মনোজগতে। খুলনার খালিশপুরের ছেলে মিরাজ শুধু একমনে করে যেতে চান নিজের কাজটা। আর বিশ্বকাপের ট্রফিটাকে সামনে দেখে প্রথম বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নটাকে বাস্তব হতে দেখছেন মিরাজ, ‘সবার স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলার। যদি সুস্থ থাকি তাহলে সুযোগ পেলে ভালো খেলার চেষ্টা করব। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভালো খেলার স্বপ্ন তো সবারই থাকে। অবশ্যই সবাই চাইবে ভালো করতে। অনেকেই অনুশীলন করছে, কেউ খেলতে পারবে কেউ পারবে না। তবে সবাই চেষ্টা করছে।’
বছর দুয়েক আগে, দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা মিরাজ হয়তো ভাবেননি এত দ্রুতই জাতীয় দলে সুযোগ হয়ে যাবে তাঁর। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ওয়ানডে দলের নিয়মিত সদস্যই বনে গেছেন এই অফস্পিনার। বিশ্বকাপে খেলারও সম্ভাবনা জোরালো। তবে জোরালো থেকে নিশ্চিত করে ফেলতে পারেন এই জিম্বাবুয়ে সিরিজেই। সাকিবের অবর্তমানে দলের স্পিন আক্রমণের তীরের ফলা হয়ে।